রিয়াদ হাসান: [২] গত রোববার টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরে বেড়ানোর সময় বুয়েটের বর্তমান ও প্রাক্তনসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। 

[৩] গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের অভিভাবকরা। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের অন্যতম আলী আম্মার মুয়াজের বড়ভাই আলী আহসান জুনায়েদ অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

[৪] অভিভাবকরা বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে আজকে অভিভাবক হিসেবে সহযোগিতা পেতে আপনাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

[৫] তারা বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর মামলা সাজানো হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

[৬] অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানদের ব্যাপারে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে তারা অবাক হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বানোয়াট সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দূরভিসন্ধিমূলক বলে তারা মনে করেন।

[৭] অভিভাবকদের ভাষ্য, রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদেরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি হাওর এলাকায় হয়ত নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ফোনে কল যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ তাদেরকে ফোনে না পেয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি। এরপর প্রায় ৩ ঘন্টা পরে রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকের কাছেই সন্তানেরা তাদের নিজের ও গার্ডিয়ানের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নাম্বার জানাতে বলে।

[৮] অভিভাবকরা আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা জানায় যে তাদেরকে পুলিশ হাওরে নৌকায় ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে। এরপর আইডি কার্ডের নাম্বার নেয়ার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এতটুকুই বলতে পারে।

[৯] তারা বলেন, সোমবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমের বরাতে আমরা জানতে পারি যে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে।

[১০] এসময় উপস্থিত অভিভাবকরা দ্রুত তাদের জামিন প্রদান ও মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

তাছাদ্দুক রাজা, সুনামগঞ্জ: [২] সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থেই আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।

[৩] সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ গত রোববার টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। সোমবার তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে এবং দুজনকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।

[৪] ইসলামী ছাত্রশিবির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী আবুল বাশার মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত নই, এখানে সংগঠনের সঙ্গে কারা কারা যুক্ত। তারা আসলে বেড়াতেই হাওরে এসেছিলেন। পুলিশ হয়রানির জন্য তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

[৫] মঙ্গলবার জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ঢাকা থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান হয়েছে। নেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা। পরে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করার পরই তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব